রাজ্য সরকারের শীর্ষ পদগুলিতে নিয়োগ হয় ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। সেদিক থেকে ডব্লুবিসিএসকে প্রশাসনের প্রবেশদ্বারও বলা যায়। এখন বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ অনেক বেড়েছে। তবুও সরকারি চাকরির কদর কমেনি কোনো অংশে। চাকরির স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও কর্তৃত্বের বিচারে রাজ্যের সেরা চাকরি হল ডব্লুবিসিএস। তাই জেনারেল শাখায় পড়া ছেলেমেয়েরা পেশা হিসাবে প্রথমে সিভিল সার্ভিসকেই বেছে নেয়। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট ও ডাক্তারি পাশ (এমবিবিএস ছাড়া) ছেলেমেয়েরাও এগিয়ে আসছে এই চাকরির দিকে। প্রার্থী যে শাখা থেকেই আসুক না কেন, যতই মেধাবী সেপড়াশোনায় হোক না কেন কতগুলি প্রাথমিক ধারণা মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। তা না হলে সাফল্য আসতে দেরি হতে পারে, ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হবে। মোদ্দা কথা হল, স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েরা কী পড়েছে বা কত ভালো ছাত্র বা ছাত্রী ছিল তা ভুলে গিয়ে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।ডব্লুবিসিএস প্রিলিমিনারিতে ইতিহাস, ভূগোল ও জেনারেল ইন্টেলিজেন্স – এই ৩টি বিষয়ে রয়েছে ১০০ নম্বর। প্রতি বছর কাট অফ নম্বরও হয় ১০০ এর কাছাকাছি। ইতিহাস ও ভূগোলের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরের প্রশ্নই আসে বেশি। তাই প্রস্তুতির শুরুতে অতি অবশ্যই রাজ্য পুস্তক পর্ষদের পুরনো সিলেবাসের নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস ও ভূগোল বইগুলি পড়ে ফেলা দরকার। বহু পরীক্ষার্থী তা না করে, এনসিইআরটি কিংবা ইউপিএস'এর মোটা মোটা জেনারেল স্টাডিজের বই পড়ে ফেলে। কেউ আবার বাংলা মাধ্যমের খুবই নিচমানেরগাইড বুক পড়ে।
ডব্লুবিসিএস প্রস্তুতির জন্য এগুলি ভুল পদক্ষেপ। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সব বই অপ্রাসঙ্গিক তথ্যে ঠাসা থাকে। মনে রাখতে হবে, রাজ্য সরকারের কোনো চাকরির জন্য রাজ্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অধ্যয়ন করাটা ভীষণ জরুরি। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও নবম-দশম শ্রেণির বই পড়া ভীষণ কার্যকরী হতে পারে। সংবিধান ও অর্থনীতির জন্য অবশ্য গ্র্যাজুয়েশনের বই পড়তে হবে। ইংরিজিতে দুর্বল ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এবিষয়টি বেশ সমস্যায় ফেলতে পারে। এই বিষয়ে তাদের বেশি নম্বর আশা না করাই ভালো। তবুও ইংরিজির ওপর নিয়মিত অনুশীলন দরকার। ডব্লুবিসিএস মোটেই কঠিন পরীক্ষা নয় । এই পরীক্ষায় একটি রূপায়ণে সক্ষম এমন পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও প্রয়োগ দরকার। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীরাই এই ৩টি ক্ষেত্রে বড়সড় গলদ করে বসে। পরীক্ষার ধরণটিকে ভালো করে বুঝে নিতে পারলে, প্রশ্নগুলিকে সঠিকভাবে পড়ে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশগুলির ওপর প্রস্তুতি নিতে পারলে, পরীক্ষাকেন্দ্রে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে দক্ষতা ও পারদর্শীতার সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারলে • ডব্লুবিসিএস পরীক্ষাটি সত্যিই সহজ হয়ে যাবে।ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য দরকার শুধুমাত্র এই পরীক্ষায় বসার সৎ সাহসটা দেখানো। সর্বদা মনের মধ্যে এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমিও পারব, আমারও সাফল্য লাভ অতি অবশ্যই সম্ভব। মনের সব নেগেটিভ চিন্তাভাবনাকে ঝেড়ে ফেলে প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পড়তে হবে নিজের মাথা খাটিয়ে, পেশি প্রদর্শন করে নয়। আর থাকতে হবে হাল না ছাড়ার মানসিকতা। লেগে থাকলে সাফল্য একদিন আসবেই – আজ না হয় কাল। সাফল্যের জন্য দরকার শুধুমাত্র নিষ্ঠা, পরিশ্রম করার সদিচ্ছা ও সঠিক সময়ে সর্বোত্তম দক্ষতা।